Sunday, January 30, 2011

স্কুলের প্রথম দিন

আমার ছেলে তখন পাঁচ ছুঁই ছুঁই|নার্সারী ক্লাসে ভর্তি হযেছে|স্কুলের প্রথম দিনে আমি ওকে স্কুলে নিয়ে এসেছি|কোনো কান্নাকাটিই করে নি আসবার সময়|বাবার সঙ্গে এসেছে,বাবা সঙ্গেই থাকবে এরকম কিছু ভেবেছিল হয়তো|আমিও নিশ্চিন্ত ছিলাম, কিন্তু ক্লাসের দরজায় পৌঁছে যেই বুঝল আমি চলে যাব,দিল কান্না জুড়ে|আমায় ছাড়বেনা কিছুতেই|যত বোঝাই স্কুলে অনেক বন্ধু হবে,খেলা ধুলো করতে পারবে,অনেক রাইমস শিখতে পারবে, কত আনন্দ  করতে পারবে, কে শোনে কার কথা|ও কিছুতেই আমার হাত ছাড়বে না,বাড়ি যাবে|বাবা মাকে ছেড়ে নিজের পরিচিত পরিবেশের বাইরে এই অজানা অচেনা ক্লাসের নির্বাসন কক্ষে যেতে ও একেবারেই নারাজ|ওর কান্না থামাতে না পেরে আমি যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছি পাশের ক্লাস থেকে এক কম বয়েসী টিচার বেরিয়ে এসে ছেলের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করে হাতে একটা চকচকে আধুলি ধরিয়ে দিলেন|ওই আধুলি টাতেই মন্ত্রের মতো কাজ হল|আমার ছেলে ওই মেয়েটির হাত ধরে ক্লাসে চলে গেল|
টাকার মর্ম তখন আমার ছেলের বোঝার কথা নয়,পারিপার্শিক জগতের 'টাকা স্বর্গ টাকা ধর্ম' মন্ত্র নিশ্চয়ই ওই বয়সে ওর অবচেতন মনে ঢুকে যায় নি| কিন্তু দুটো মিষ্টি কথা আর ওই চকচকে ধাতব আধুলিটাই মন্ত্রের মতো কাজ করেছিল সেদিন,ওই দিয়েই টিচার মেয়েটি সম্ভবত বোঝাতে পেরেছিলেন ও পুরোপুরি শত্রুপুরীতে এসে উপস্থিত হয় নি|
আমার নিজের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্যরকম|আমি যখন প্রথম স্কুলে যাই আমার বয়েস আটের কাছাকাছি|স্কুলে যেতে হবে বলে কান্নাকাটি করার বয়েস পেরিয়ে এসেছি|তাছাড়া বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলোয় তখন আমি অভ্যস্থ|আমার সমস্যা হলো অন্যজায়গায়|আমাদের হেঁটেই স্কুলে যেতে হত,দূরত্ব এমন কিছু নয়,যদিও আজকের দিনে একেই বেশ দূর মনে করেন অনেক বাবা মা|কালিঘাটে আমাদের বাড়ি থেকে চেতলা স্কুলে যেতে পথে আদি গঙ্গার উপরের কাঠের পুল পেরোতে হত|এখন আর সে কাঠের পুল নেই,এখন সেটাই পাকাপোক্ত চেতলা ব্রিজ|কাঠের পুলের পাটাতনগুলোর ফাঁক দিয়ে তলায় বয়ে যাওয়া গঙ্গার ঘোলাটে জলের স্রোত স্পষ্ট দেখা যেত|প্রথম দিন তো বটেই,বেশ কয়েকদিন ওই ব্রিজ পার হতে আমার খুব ভয় করত|মনে হত গলে পরে যাব|হাতে বই খাতা নিয়ে পা টিপে টিপে নাম জপ করতে করতে পার হতাম|দুচারদিনেই ভয়টা চলে গেলো,কবে তা মনে নেই|    

2 comments:

  1. - অনিন্দ্যJanuary 31, 2011 at 10:19 PM

    পড়ে বেশ মজা লাগলো . পৈশা দেখে পিছু পিছু যাবার অভেশ মনে হচ্ছে আমার বেশ পুরনো . আজকাল তো বাচ্ছাদের ৩ বছর বয়সে school -e দেবা হয় , ওদের জন্য বেশ tortous .

    ReplyDelete
  2. 1.Yes, that half-rupee coin might have given you some focus !
    2.It is really a torture for the children of today.
    3.Use phonetic spelling- poysa for পয়সা, obhyes for অভ্যেস, skoole for স্কুলে and the marker above \ in the keyboard for |.And if you install the IME you can alternate between English and Bengali at will.

    ReplyDelete